আজ || রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শিরোনাম :
  বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন       যুক্তরাজ্য কৃষক দল শাখার সদস্য সচিব শাহ মো. ইব্রাহিম বাহরাইন আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা প্রদান       বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন মর্যাদা দিলেন ড. ইউনূস: বললেন ইলন মাস্ক       বাহরাইনে আল জিয়ানী সেন্টারের উদ্যোগে ১০তম তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত       ফেনীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়ায় মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় নিহত ৬,আহত-৯       ফেনীর দাগনভূঞায় পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু       ফেনীর দাগনভূঞায় সিদীপ’র উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প       আলোকিত বাতশিরি জনকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে বিনামূল্যে মক্তব শিক্ষার উদ্বোধন       ফেনী ইউনিভার্সিটির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত       ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাঝে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ    
 


চলে গেছে জলোচ্ছ্বাস,রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :

সপ্তাহ খানেকেরও বেশি সময় হয়ে গেল লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা উপকূলে শক্তিশালী এক জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানার। আকষ্মিক জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে নদীতীরের সব। উপকূলের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। ঘরের ভেতর হাঁটুসম পানি৷ পোকামাকড়, সাপ, বিচ্চুর ভয়। তবুও বেঁচে থাকতে হয়। কারণ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটার মাঝেই যে বেঁচে থাকতে হয় এখানের মানুষকে।

৫ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের মেঘনাতীরের ৬০কিলোমিটার এলাকায় যে মাঝারি জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো, এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদহানি হয়েছে উপকূলবাসীদের। মেঘনাতীরের পথ ধরে হাঁটলে এখন কেবলই চোখে পড়ে ক্ষতচিহ্ন। বেড়িবাঁধ না থাকায়, মেঘনার পানি ফুঁসে উঠে তীরে এক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ৭ফুট উচ্চতার এমন জলোচ্ছ্বাস গত ২০বছরেও দেখেনি প্রবীণরা। তারা বলছেন, জোয়ারের পানি কয়েক মিনিটের মধ্যেই তীরে আঘাত হানে এবং মুহুর্তেই উপকূল অঞ্চলের নদী থেকে কয়েক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী তান্ডব চালায়।

জলোচ্ছ্বাসে কেউ ঘর হারিয়েছেন, কেউ পুকুরের মাছ হারিয়েছেন, ঘরের আলমিরা, স্বর্ণালংকার হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার কেউবা হারালেন চলাচলের একমাত্র পথটি। জলোচ্ছ্বাসে ক্ষত-বিক্ষত মেঘনাতীরের পথ ধরে হাঁটলে সবখানেই কম বেশি এ ক্ষতটা চোখে পড়ে। তবে প্রতিবেদকের চোখে জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলাতে ক্ষতের চিহ্নটাই একটু বেশি। কমলনগরের চর মার্টিনের ৮নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে পুরো ওয়ার্ডের রাস্তা-ঘাটগুলো তছনছ হয়ে যায়।

কমলনগরের বাণিজ্যিক এলাকা তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কের ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে মতিরহাট অংশের পুরোটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে। যেখান দিয়ে পথচারীদেরও চলতে ভয়। যানবাহন চলছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। চর মার্টিনের বলিরপোল থেকে চর কালকিনির নাছিরগঞ্জ নির্মাণধীন সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে জলোচ্ছ্বাসের প্রবল স্রোতে। ভাঙাচোরা এ সড়ক যেন এখন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসের খবর কাভার করতে নদীপাড়ে গেলে দেখা যায়, বহু মানুষের ভিটি থেকে মাটি সরে গেছে। ঘরের গোছানো থালা-বাসন, সবটাই জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে। চোখে পড়ে, কেউ কেউ জোয়ারে ভেসে যাওয়া পুকুরের মাছ আটকাতে না পেরে অঝোরে কাঁদছেন। যেন সব চোখে ভাসছে এখনো। নদীতীরের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। সে সব বেড়িবাঁধ মেরামতে এখনো কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে অনেকের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠছে খেয়া পারাপার।

চর কালকিনির নাছিরগঞ্জ থেকে উত্তরে মানিকগঞ্জ বেড়িবাঁধটি জোয়ারে ভেঙে যায়। ফলে ওই এলাকাতে স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলেও জোয়ারে বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে যায়। এ দিকে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকের ফসলি জমি। ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর আউশের। নষ্ট হয়েছে আমন বীজের।

স্থানীয় মানুষজন বলছেন,যা ক্ষতি হয়েছে, সেটা অপূরণীয় ক্ষতি। বিগত কয়েক দশকের ঘূর্ণিঝড়েও এমন ক্ষতির মুখে পড়েনি তারা। ক্ষতিপূরণের তেমন একটা উদ্যোগও দেখা যায়নি।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটগুলো দ্রুত দাবি জানিয়েছেন চলাচলকারী যাত্রী ও মানুষজন। তারা বলছেন, মেঘনাতীর হওয়াতে এ অঞ্চলটা নদী কেন্দ্রিক অর্থনীতি নির্ভর। বিশেষ করে ইলিশের বাজারজাতকরণে সড়কগুলো বড় ভূমিকা রাখে৷ সড়কগুলোর এমন বেহাল দশাতে ব্যবসায় বড় ধরণের ক্ষতি দেখছেন ইলিশ ব্যবসায়ীরা।

কমলনগরের চর মার্টিনের মানিকগঞ্জ বাজারের প্রতিষ্ঠাতা মাকছুদুর রহমান মানিক জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা উদ্যোক্তা হতাম। নিজেরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোগী হতাম। আমি কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে একটা বাজার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার দোকানের ভিটির ২লক্ষ টাকার মাটি জোয়ারের পানি ধুয়ে চলে গেছে। আমার ব্যবসায়ীদের দোকানপাটগুলো সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সবাই এখন অসহায়। আমরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই। এ ছাড়া আমাদের কোন পথ নাই।

চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সায়েফ উল্লাহ বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন। নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নদী প্রতিনিয়ত মানুষের ভিটে-মাটিতো বিলীন করছেই, পাশাপাশি একটু জোয়ার হলে পানিতে সব তলিয়ে যায়। মানুষদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

 


Top